সোনারগাঁও উপজেলার বৈদ্যের বাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ওমেদার জাকির হোসেন অনিয়মকে নিয়ম করে ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক


 জসিম উদ্দিনঃ
নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁও উপজেলার বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ওমেদার জাকির হোসেনের খুটির জোর কোথায় এ প্রশ্ন সোনারগাঁয়ের প্রতিটি দলিল লেখকসহ সাধারন মানুষের। ওমেদার জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে সম্পদের পাহাড় গড়াসহ শতাধিক অভিযোগে আড়াইহাজার উপজেলায় বদলির দু’মাসের মধ্যে পুনরায় ব্যাপক তদবির করে সোনারগাঁও উপজেলার বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যোগ দেয়। সামান্য ওমেদার হয়ে জাকির হোসেনের মাসিক আয় ৩০ লাক্ষ টাকার উপরে। বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সব অনিয়ম ও দুর্নীততে সরাসরি জড়িত থাকার পরও কার্যত জাকিরের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাাই নেয়া হয়নি। সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অলিখিত সাব-রেজিস্ট্রার হচ্ছে ওমেদার জাকির হোসেন। কোন দলিল সম্পাদন হবে, কোন দলিল হবে না তার সিদ্ধান্ত আসে জাকির হোসেনের কাছ থেকে। সাব-রেজিস্ট্রার এর নামে প্রতিদিন বিকালে সকল দলিল লেখকদের কাছ থেকে টাকা তুলেন ওমেদার জাকির হোসেন। দীর্ঘদিন যাবত এক অফিসে থেকে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়ালেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্হাই নেয়া হয় নি। এমনকি, কোন দলিল সম্পাদন করতে কত টাকা ঘুষ দিতে হবে, তার সিদ্ধান্ত দিবে ওমেদার জাকির। কাগজপত্রে যত ঝামেলা থাকুক, মালিকানা থাকুক আর না থাকুক, ভূয়া ব্যক্তিকে মালিক সাঁজিয়ে রেজিষ্ট্রি করা, ভূয়া ও সৃজনকৃত কাগজে রেজিষ্ট্রি হউক না কেন? ওমেদার জাকির হোসেনকে ম্যানেজ করতে পারলে সহজেই দলিল সম্পাদন হয়ে যায় বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, ওমেদার জাকির হোসেন অনিয়মকে নিয়ম করে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ওমেদার জাকির হোসেন নিজেকে নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহা-পরিদর্শকের আত্মীয় পরিচয়ে এবং বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রশিদ মন্ডলের নাম ভাঙ্গীয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পুরো সোনারগাঁও। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে ওমেদার জাকির হোসেন হয়ে গেছেন টাকার কুমির। জমি, আলিশান ফ্লাট ও বাড়ীসহ নামে বেনামে কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি।

বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের এক দলিল লেখক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, এ পর্যন্ত হাজারের উপর ভূয়া জাতীয় পরিচয় পত্র বানিয়ে ও ভূয়া দলিল দাতা এবং সৃজনকৃত কাগজপত্রে বিভিন্ন কোম্পানির নামে দলিল সম্পাদন হয়েছে। প্রতিটি দলিলে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে এহেন অপকর্ম করেছে ওমেদার জাকির হোসেন। এমনকি, দলিল সম্পাদনের পরে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে দাগ, খতিয়ান ও জমির পরিমান পর্যন্ত পরিবর্তন করে এই জাকির হোসেন। পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকার বিনিময়ে দলিলে জমির পরিমান কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় জাকির হোসেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার হাড়িয়া এলাকায় এক ব্যক্তি পাঁচ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। জমি বিক্রির দলিলে সহি করে ফটোকপি নিজের কাছে রাখেন ওই ব্যক্তি। কয়েক মাস পরে দলিলের সহি মোহর নকল তুলে দেখে তিনি জমি বিক্রি করেছে ৪২ শতাংশ। বর্তমানে এ বিষয়ে নারায়নগঞ্জ জজ কোর্টে মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়াও, রেজিষ্ট্রি সংক্রান্ত যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারেন ওমেদার জাকির হোসেন। সোনারগাঁও উপজেলার বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রতিটি দলিল থেকে নির্দিষ্ট হারে টাকা পান ওমেদার জাকির হোসেন।

জানা গেছে, ওমেদার জাকির হোসেনের বিভিন্ন অপকর্মের জন্য সোনারগাঁও থেকে আড়াইহাজার উপজেলায় বদলি করা হয়। কিন্তু বদলির মাত্র ২ মাসের মাথায় ওমেদার জাকির পুনরায় অদৃশ্য শক্তির জোরে সোনারগাঁয়ে ফিরে আসেন। তাই পুরো সোনারগাঁবাসীর মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, একজন সামান্য ওমেদারের এত ক্ষমতার উৎস কোথায়?

সোনারগাঁয়ে যোগ দিয়েই ওমেদার জাকির অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। নারায়নগঞ্জ সোনারগাঁয়ে রয়েছে জাকির হোসেনের বিশাল আলিশান বাড়ি। চাকরি পাবার পরে সোনারগাঁয়ের জামপুরে কিনেছেন বিশাল পরিমান জমি। অফিস সময়ের পরে সে এলিয়ন গাড়ি হাকিয়ে চলেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, যে কোন ঝামেলার ও কাগজে ক্রটিপূর্ন ও কাগজপত্রে সমস্যা থাকলে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কন্ট্রাক্ট করতে হয় জাকিরের সাথে। টাকা যত বেশি কাজ তত দ্রুত। টাকা বেশি দিলে যে কোন কাজ করানো যায় ওমেদার জাকির কে দিয়ে। ভূক্তভোগী ও স্হানীয় এলাকাবাসী, দুদকের মাধ্যমে ওমেদার জাকির হোসেনের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত দাবির পাশাপাশি তাকে অন্যত্র বদলির দাবি জানায়।

এসব ব্যাপারে মুঠোফোনে কথা হয় বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ওমেদার জাকির হোসেনের সাথে। তিনি জানায়,আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। কারন জমির দলিলসহ যাবতীয় কাজ সাব রেজিষ্টারের কাজ আর আমার কাজ হলো কাগজপত্র টেনে দেয়া।

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে বৈদ্যেরবাজার সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুর রশিদ মন্ডল বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি।

শেয়ার করুন

লেখকঃ

পূর্ববর্তী পোষ্ট
পরবর্তী পোষ্ট